ওগো দশ দুয়ারী মাইয়া
ভাব হইলো না তোমার লগে
পিরিতর গান গাইয়া।
আমার সোনার যৌবন
নষ্টগো করলাম
তোমার পানে চাইয়া।
আমারে করসিলায় পাগল
মাইরা চউকর বান
নয় ছয় বুঝাইয়া আমারে
নিসলায় মনো প্রাণ।
হাতর ধারো আসমানর চান
পাইসলাম তোমায় ফাইয়া।
চলনে বলনে যায়না
তোমার ভিতর বুঝা
সর্ব ধন সঁপিয়াগো আমি
করসি ভূতর পূজা।
পাগল হাসন হইসন সোজা
পিরিতের সেল খাইয়া।
Song: Dosh Duari Maiya
Lyric, Tune & Singer: Pagol Hasan
পরিচিতি ও শৈশব
- তিনি মতিউর রহমান হাসান, শিল্পজগতে পরিচিত পাগল হাসান নামে। জন্ম তার ১ জুন ১৯৮৫, সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার শিমুলতলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ।
- শৈশবে বাবা—বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের বীর—দিলশাদ মিয়া তিনি হারান। মা আমেনা বেগমের আদরে বড় হন ।
- প্রাথমিক শিক্ষা শুরু শিমুলতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে, যা তিনি নিজের “ইউনিভার্সিটি” বলতেন ।
সংগ্রাম ও কারিগরি চাকরি
- সংসারের দায়িত্বের বোঝা সামলে পড়াশোনা খুব এগোতে পারেনি। গ্রামের অসংখ্য কষ্ট সত্ত্বেও সাহস ধরে কাজ করেছেন ।
- চাকরি করেন: ২০০৪ সালে সুনামগঞ্জ সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজে অফিস সহায়ক হিসেবে যোগ দেন ।
- ২০১২ সালে পূর্ণভাবে গান ও সৃষ্টিতে মনোনিবেশ করতে সরকারি চাকরি থেকে অবসরে যান ।
সঙ্গীত যাত্রা ও সৃজনশীলতা
- গান ও সুরার্জনে শিক্ষকের ভূমিকা পালন করেছিলেন দেবদাস রঞ্জন দা, যিনি তাকে স্পন্দন সংগীত বিদ্যালয়ে নিয়ে যান ।
- সর্বমোট গীতিকার, সুরকার ও শিল্পী হিসেবে রচনাকার্য করেছেন প্রায় একে-দুই হাজার গান ।
- তার জনপ্রিয় গানের মধ্যে — “আসমানে যাইওনারে বন্ধু”, “জীবন খাতায় প্রেম কলঙ্ক”, “মাটির বালাখানা”, “মন আমার মরা নদী”, “পাগলার গড়া ঘোড়া”— প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য ।
- তিনি “পাগল এক্সপ্রেস” নামের একটি গানের দলও প্রতিষ্ঠা করেন, যা ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠিত ।
- তাঁর গানে ভেঙে ওঠা আবেগ, মাটির টান ও আধ্যাত্মিক মর্ম অনুভব করা যায় ।
- ব্যতিক্রমি প্রতিভা হিসেবে তাঁকে বাউল সংগীতের উত্তরসূরীও বলা হতো ।
ব্যক্তিগত জীবন
- বিবাহিত, প্রথম স্ত্রী লুৎফা বেগম; প্রথম পুত্র—মাকসুদুর রহমান (জিনান), দ্বিতীয় পুত্র—মুশফিকুর রহমান (জিসান) ।
- ২০২৩ সালে যুক্তরাজ্য প্রবাসী মর্জিনা আক্তারের সঙ্গে দ্বিতীয়ভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন ।
আকস্মিক মৃত্যু ও স্মরণ
- তিনি ১৮ এপ্রিল ২০২৪ সকাল সাড়ে ৭টায় সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলা, সুরমা ব্রিজ এলাকায় একটি বাস ও সিএনজি অটোরিকশার সংঘর্ষে প্রাণ হারান। তার সঙ্গে ছিলেন একই গ্রামের সাত্তার মিয়া ।
- মরণোত্তর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন হয় জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে, যেখানে শিল্পীরা তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান ।
- স্মরণসভা ও কথায় বলা হয়: “পাগল হাসানের ‘পরম দুঃখের জীবন’ ও অব্যাহত সাধনা তরুণদের প্রেরণা” ।
- সুনামগঞ্জ সংস্কৃতি অঙ্গনে এই ক্ষতি অপূরণীয় বলে স্মৃতিচারণ করা হয় ।
সংগীত উত্তরাধিকার
- ২০২৫ সালে ব্যান্ড ‘লালন’ তার সঙ্গে রচিত গান “বাগানের মালী” প্রকাশ করার কাজ করছে, এটি একটি স্মরণমূলক সংযোজন ।
সারসংক্ষেপ:
পাগল হাসান ছিলেন হৃদয়ের বাউল, যিনি দারিদ্র্য, দুঃখ ও সংগ্রামের মধ্যেও গানের ভাষায় মানুষের ভেতরের আর্তনাদকে তুলে ধরতেন। একজন গীতিকার, সুরকার ও গায়ক হিসেবে তিনি পাহাড়-নদীর মিশেলে মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণা, আধ্যাত্মিকতা এবং মাটির মায়া সুরে ভরিয়ে তুলেছিলেন। তাঁর অকাল মৃত্যু বাংলাদেশের লোকসংগীত ও সৃষ্টিশীল তরুণ প্রতিভার জন্য একটি বড় ক্ষতি হয়ে ওঠে।
আপনি যদি গানের লেখা, সুর বা অন্যান্য দিক নিয়ে আরও জানতে চান, তবে জানাতে পারেন—আমি সহায়তা করতে প্রস্তুত।