তুমি বা কার, কে বা তোমার
এই সংসারে ৷
মিছে মায়ায় মজিয়ে মন
কী কর রে ॥

এত পিরিত দন্ত জিহ্বায়
কায়দা পেলে সেও সাজা দেয়
স্বল্পতে সব জানিতে পাই
ভাব নগরে ॥

সময়ে সকলি সখা
অসময় কেউ দেয় না দেখা
যার পাপে সে ভোগে একা
চার যুগে রে ॥

আপনি যখন নই আপনার
কারে বল আমার আমার
সিরাজ সাঁই কয় লালন তোমার
জ্ঞান নাহি রে ॥

.

লালন সাঁই (১৭৭৪–১৮৯০) ছিলেন একজন বাঙালি আধ্যাত্মিক সাধক, সমাজ সংস্কারক, দার্শনিক, গীতিকার, সুরকার এবং বাউল গানের অগ্রদূত, যিনি বাউল সম্রাট নামে পরিচিত। তাঁর নিজস্ব কোনো পাণ্ডুলিপি ছিল না, তবে তাঁর প্রায় দুই হাজার গান মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে এবং মানবতাবাদ, মানবতা ও অসাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গির প্রচার করে। লালনের মানবতাবাদী দর্শন জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে সকল ভেদাভেদ প্রত্যাখ্যান করে। 

প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা:

  • লালন শাহ ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এবং ফকির লালন, লালন সাঁই, লালন শাহ, মহাত্মা লালন ইত্যাদি নামে পরিচিত। 
  • তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও, তিনি নিজ সাধনাবলে হিন্দু-মুসলিম উভয় ধর্মের শাস্ত্র সম্পর্কে গভীর জ্ঞান লাভ করেছিলেন। 

দর্শন ও কর্ম:

  • লালন তাঁর গানে মানবজীবনের আদর্শ, মানবতাবাদ ও অসাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গির কথা বলেছেন। 
  • তাঁর গানে গভীর তাৎপর্যপূর্ণ এবং মর্মস্পর্শী ভাবধারা রয়েছে। 
  • তিনি বাউল গানের অন্যতম অগ্রদূত এবং বাউল গানের সম্রাট হিসেবে বিবেচিত হন। 

প্রভাব:

  • লালনের দর্শন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম এবং অ্যালেন গিন্সবার্গসহ অনেক কবি, দার্শনিক ও সমাজ চিন্তাবিদকে অনুপ্রাণিত করেছে। 
  • তাঁর গান উনিশ শতকে জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং বাংলা সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়। 

মৃত্যু ও স্মৃতি:

  • লালন ১৭ অক্টোবর ১৮৯০ সালে মৃত্যুবরণ করেন। 
  • তাঁর মাজার কুষ্টিয়া শহরের কাছে অবস্থিত, যেখানে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বহু মানুষ আসেন। 

0 CommentsClose Comments

Leave a comment

Newsletter Subscribe

Get the Latest Posts & Articles in Your Email

We Promise Not to Send Spam:)