ফের পল তাের ফকিরিতে।
যে ঘাট মারা ফিকির ফাকার
ডুবে মলি সেই ঘাটেতে ॥
ফকিরি সে এক নাগাড়ী
অধর ধরে দিতাম বেড়ী
পাস্তানি খালা দুয়ারী
তাই দেখে রেখেছি পেতে ॥
না জেনে ফকিরি আঁটা
শিরেতে পড়ালাম জটা
সার হলো ভাং ধুতরা ঘাটা
ভজন সাধন সব চুলাতে ॥
ফকিরি ফিকিরি করা
হতে হবে জ্যান্তে মরা
লালন ফকির নেংটী এড়া
আট বসে না কোনো মতে ॥
.
.
ফকির লালন শাহ্ ছিলেন বাংলা সুফি ধারার অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাধক, দার্শনিক ও বাউল গানের প্রবর্তক। তিনি ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দে (প্রায়) কুষ্টিয়া জেলার ছেঁউড়িয়াতে জন্মগ্রহণ করেন বলে ধারণা করা হয়। লালন ছিলেন এক সাধারণ গ্রামীণ মানুষ, কিন্তু তাঁর ভাবনা ও দর্শন ছিল গভীর মানবতাবাদে পরিপূর্ণ। তিনি জাত, ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায়—সব ধরনের বিভেদ অস্বীকার করে মানুষের মধ্যে ভালোবাসা, সহানুভূতি ও সাম্যের বাণী প্রচার করেছেন। তাঁর গানগুলিতে আত্মার মুক্তি, মানবপ্রেম, সমাজসংস্কার ও ঈশ্বরপ্রেমের দর্শন প্রকাশ পেয়েছে। লালনের জীবনযাপন ছিল অত্যন্ত সহজ ও ত্যাগপূর্ণ; তিনি নিজের আখড়ায় শিষ্যদের সঙ্গে থেকে গান ও সাধনার মাধ্যমে সত্য ও প্রেমের শিক্ষা দিয়েছেন। ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে তিনি পরলোকগমন করেন। আজও তাঁর রচিত বাউল গান ও দর্শন বাংলা সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং বিশ্বমানবতার প্রতীক হিসেবে সমাদৃত।
