দুঃখ বলব কারে মনের দুঃখ বলব কারে
বাঁচতে চাই বাঁচার উপায় নাই দিনে দিনে দুঃখ বাড়ে ॥
ব্রিটিশের বিরুদ্ধে যখন আসে স্বদেশী আন্দোলন
ভারতবাসী সবাই তখন একই দাবি করে।
ব্রিটিশ যাইবে যখন ভারতবর্ষ ছেড়ে
সবাই তখন সুখে রবে এই আশা সবার অন্তরে ॥
পূর্ব থেকেই দেশপ্রেমিকগণ করে এই মুক্তি-আন্দোলন
অনেকে দিয়েছে জীবন ন্যায্য দাবি করে
আসিল গণ-আন্দোলন প্রতি ঘরে ঘরে
জনগণ চায় না যখন সে কি আর থাকতে পারে ॥
তখন উঠিল শ্লোগান লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান
শোষক তার শোষণের সন্ধান সু-কৌশলে করে
ভারতের বাঙালি তখন ধর্মের ভাওতায় পড়ে
কেউ হিন্দু কেউ মুসলমান একে অন্যেরে মারে ॥
আসল কথা ছেড়ে দিয়া দ্বন্দ্ব আসে ধর্ম নিয়া
বাঙালি ধোঁকায় পড়িয়া পথ ভুলিয়া মরে
স্বার্থপর শোষকদের শোষণের ফাঁদে পড়ে
ধর্ম নিয়ে মারামারি ভারতকে বিভক্ত করে ॥
পাইলাম পূর্ব পাকিস্তান হইলাম খাঁটি মুসলমান
হলো না শান্তি বিধান পড়লাম বিষম ফেরে
গত হলো তের বৎসর স্বাধীনতার পরে
বাঙালিদের তখন শোষণ-নির্যাতন করে ॥
বাঙালি মজুর-চাষা বাংলা তাদের মূল ভরসা
উর্দু হবে রাষ্ট্রভাষা বলে গায়ের জোরে।
মুখের বোল কেড়ে নিতে চায় মানতে কি আর পারে
ছাত্রগণ তারা তখন ভাষার জন্য লড়াই করে ॥
স্বাধীন দেশেতে যখন আসে সামরিক শাসন
জনগণ ভাবে তখন কী হবে তার পরে।
এই অবস্থায় দশটি বছর রইল ধৈর্য ধরে
ভয়ে তখন কাপে অন্তর কখন জানি কী যে করে ॥
আইয়ূব চলে গেল যখন হলো ইয়াহিয়ার আগমন
রাতের আঁধারে তখন দেশ আক্রমণ করে
বুদ্ধিজীবীগণকে প্রথম সন্ধান করে মারে
দেশবাসী তারা তখন পড়িল ঘোর আঁধারে ॥
বাংলার দালাল রাজাকার করেছিল কী ব্যবহার
তাহাদের কথা আমার আজো মনে পড়ে
বাংলার দুর্দিনে এই দালাল রাজাকারে
ইসলামের দোহাই দিয়া শত্রুকে সমর্থন করে ॥
শেখ মুজিব ঘোষণা দিলেন বাঙালি অস্ত্র ধরিলেন
ওসমানী দায়িত্ব নিলেন মুজিব কারাগারে।
নজরুল-তাজউদ্দিন ছিলেন দেশের ভিতরে
দেশপ্রেমিকগণ নিয়ে তখন মুজিবনগর সরকার গড়ে ॥
বিভিন্ন দলনেতা সবার মুখে একই কথা
অন্তরে দিল ব্যথা দালাল রাজাকারে।
চলিল পাল্টা লড়াই মরণের ভয় ছেড়ে
হানাদার বাহিনী তখন লাখো লাখো মানুষ মারে ॥
দেখামাত্র গুলি চালায় বাড়ি ঘরে আগুন জ্বালায়
দেশের মানুষ নিরুপায় হলেন একেবারে।
অনেকেই চলে গেলেন দেশের বাহিরে
দেশের ভিতরে যারা পড়লেন নিরাশার আঁধারে ॥
সাধারণ জনগণ নিরাশা-দূরাশায় তখন
ভাবিতেছে হবে মরণ বাঁচিবে কী করে।
হানাদার বাহিনী আর দালাল রাজাকার
ধনরত্ন লুট করে নেয় মা-বোনদের ইজ্জত মারে ॥
ওসমানীর নেতৃত্বে তাই চলিল পাল্টা লড়াই
এছাড়া যে উপায় নাই বাঁচিবে কী করে।
জন্মিলে মরণ আছে ভেবে তা অন্তরে
হিন্দু-মুসলিম নারী-পুরুষ সবাই তখন অস্ত্র ধরে ॥
ভারতের সৈন্যগণ করে ন্যায়ের সমর্থন
এক সঙ্গে মিলে যখন আক্রমণ করে
হানাদার বাহিনী তখন অসুবিধায় পড়ে
মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে ॥
উড়িল বিজয় নিশান সবাই গায় বিজয়ের গান
মিলিয়া হিন্দু-মুসলমান গায় যে একই স্বরে।
আসিল স্বাধীনতা নয়মাসে যুদ্ধের পরে
হিন্দু-মুসলিমের একতা আবার আসিল ফিরে ॥
স্বাধীন দেশেতে এবার গড়িলেন নতুন সরকার
শেখ মুজিবকে ক্ষমতার অধিকারী করে।
জানি না কী ভেবেছিলেন কী ছিল অন্তরে
সমস্ত খুনিদেরে দিলেন তখন ক্ষমা করে ॥
সন্তানাদি মরে যার পিতামাতা দাবিদার
খুনিদের খুনের বিচার আইনে তাহা করে।
দুঃখ কষ্টে চার বৎসর গত হলো পরে
শত্রুগণ তারা তখন শেখ মুজিবকে হত্যা করে ॥
সবংশে নিধন করিল কারেও না ছেড়ে দিল
আপন কর্ম সেরে নিল শোষক স্বৈরাচারে।
মুক্তিকামী ছিলেন যারা পড়িলেন আঁধারে
বাঙালি নয় বাংলাদেশী নামকে পরিবর্তন করে ॥
চলিল স্বৈরশাসন কত কথা হয় যে স্মরণ
গরিব কাঙালের মরণ দুঃখ কষ্ট করে।
ভাঙাগড়া দেখলাম কত মনে তাহা পড়ে
শোষক শয়তান বড় নাদান কত রঙ সে ধরতে পারে ॥
আসিলেন শেখ হাসিনা সবার নয় চিনা-জানা
মুজিবের মেয়ে কি না তাইতো শ্রদ্ধা করে।
ভাবিলেন মুজিব আবার আসিয়াছেন ফিরে
মানুষ যে মরে যায় স্মৃতি থাকে এই সংসারে ॥
হাসিনা আসিলেন যখন আসিল গণ-জাগরণ
মুক্তিকামী সবাই তখন সমর্থন করে।
অসহযোগ আন্দোলন গড়ে নিলেন পরে
ন্যায়নিষ্ঠভাবে তখন নির্বাচনে জয়লাভ করে ॥
হাসিনার নেতৃত্বে তাই আজ যখন ক্ষমতা পাই
আমাদের দাবি জানাই একুশ বৎসর পরে।
দুর্নীতি স্বজনপ্রীতি লোভ লালসা ছেড়ে
শোষকমুক্ত সমাজ গড়ো সবাই যাতে বাঁচতে পারে ॥
রক্তের বিনিময়ে তাই দেশের স্বাধীনতা পাই
অর্থনৈতিক মুক্তি চাই বলি বারে-বারে।
এখন আওয়ামী লীগ সরকার দেশকে শাসন করে
হয় যদি শোষণ নির্যাতন দোষ দিবে শেখ হাসিনারে ॥
দেশের বিপন্ন যারা আসলে সর্বহারা
অনাহারে যাবে মারা বাঁচিবে কী করে।
স্বজনপ্রীতি ঘুষ-দুর্নীতি চলছে ঘরে ঘরে
গরিব বাঁচার উপায় নাই আর সবলে দুর্বলকে মারে ॥
আমরা মজুর-চাষি দেশকে যদি ভালোবাসি
সবার মুখে ফুটবে হাসি দুঃখ যাবে দূরে।
শোষণ-নির্যাতন শুধু শোষক দলে করে
কৃষক-মজুর এক হয়ে যাও রবে না আর অন্ধকারে ॥
এই আমার শেষ নিবেদন মনে ভাবি সর্বক্ষণ
পিঞ্জিরা ছাড়িয়া কখন পাখি যাবে উড়ে।
মিছে সংসার কেউ নহে কার থাকতে কি কেউ পারে
করিম বলে সন্ধ্যা হলে পড়িবে ঘোর আঁধারে ॥